সবসময় টাকা বড় বিষয় না—কখনো কখনো বিশ্বাসই যথেষ্ট

কিছুদিন আগে। আপওয়ার্কে হঠাৎ ইউকে থেকে একজন ক্লায়েন্ট একটা জবে ইনভাইট করলেন। কাজটা দেখে মনে হলো ভালোই হবে — ওয়েবসাইট ফিক্সিং, কিছু ইউআই ইমপ্রুভমেন্ট, মোটামুটি একটা মাঝারি লেভেলের প্রজেক্ট। স্বাভাবিকভাবেই আমি আগ্রহ নিয়ে এপ্লাই করলাম।
কিন্তু যতটা আগ্রহ নিয়ে এপ্লাই করেছিলাম, ততটাই হতাশ হলাম যখন দেখলাম তার বাজেট মাত্র ২০ ডলার!
একটু অবাক হলাম। আর তাকে বুঝানোর ট্রাই করলাম — এটা তো ২০ ডলারের কাজ না! এরপর ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করার চেষ্টা করলাম যে কাজটার মিনিমাম বাজেট হওয়া উচিত কমপক্ষে ১০০ ডলার।
তার পুরো ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখলাম কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, কীভাবে সমাধান করা যায়, কোন প্রসেসে কাজ করব — একটি কমপ্লিট রিপোর্ট তৈরি করে তাকে সেন্ড করি।
কিন্তু না। তাতেও সে তার বাজেটের বাইরে যেতে রাজী নন।
আমিও অবশেষে বিরক্ত হয়ে ডিসিশন নেই — এই কাজ আমি করব না।
জব প্রপোজালটা উইথড্র করে দিই। মন থেকে পুরো ব্যাপারটা মুছে ফেলি।
তারপর ঘটে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা।
রাত তখন প্রায় ৩টা। হঠাৎ একটা মেসেজ এল ক্লায়েন্টের কাছ থেকে।
সে লিখেছে:
"একচুয়ালি আমার এখন এই কাজের জন্য বাজেট নেই।
ইফ ইউ ওয়ান্ট, তাহলে কাজটা করে দিন।
এখন ২০ ডলার দিব, পরে পেমেন্ট করব বাকিটা।"
রাতে নাকি মানুষ একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়।
আমি এটাও জানি, এই 'পরে পেমেন্ট' কথাটায় বিশ্বাস করা বোকামি।
তবুও কেন জানি মনে হলো, হয়তো তার এখন এর থেকে বেশি পেমেন্ট করা সম্ভব নয়। মানুষের কত সমস্যাইতো থাকতে পারে।
এবং আমি ডিসাইড করলাম — আই উইল ডু দিস প্রোজেক্ট।
না, তার টাকার জন্য নয়।
নিজেকে প্রমাণ করার জন্য।
একজন পেশাদার হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য।
কাজ শুরু করলাম।
পরের ৩ দিন সত্যি বলতে অনেক প্যারা গেছে —
“এটা চাই না”, “ওটা আবার ঠিক করো”, “এইটা একটু এডজাস্ট করো”,
মাঝে মাঝে মেজাজ গরম হয়ে উঠতো —
কিন্তু নিজেকে বুঝাতাম,
যখন কাজ নিয়েছি, তখন শেষ করতেই হবে।
সবার মতো আমিও চাই, আমার প্রতিটি প্রজেক্ট যেন আমার রিকমেন্ডেশন হয়ে থাকে ভবিষ্যতের জন্য।
অবশেষে, সব মেনে নিয়েই কাজটা শেষ করলাম, সাবমিট করলাম।
তারপর কেটে গেল এক সপ্তাহ।
এই ক্লায়েন্ট, এই প্রজেক্ট — সব ভুলে গেছি।
গেস হোয়াট, হঠাৎ গতকাল দেখি, আবার সেই ক্লায়েন্ট একটা প্রোপোজাল পাঠিয়েছে —
বাজেট ১২০ ডলার।
ভাবলাম, হয়তো নতুন কোনো প্রজেক্ট।
কিন্তু না — এবার সে লিখেছে:
“তোমাকে আগের প্রজেক্টে ঠিকভাবে পেমেন্ট দিতে পারিনি।
এটা সেই কাজের জন্য।”
মনটা কেমন করে উঠল।
এই সেই ২০ ডলারের ক্লায়েন্ট, যার উপর একসময় রাগ হয়েছিল, যার সাথে অনেক প্যারা গেছে...
সে-ই আজ সম্মান ফিরিয়ে দিলো।
এই ছোট্ট গল্প আমাকে আবার বিশ্বাস করালো:
🔸 সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় মনের ভিতরের কণ্ঠ শুনে।
🔸 পেশাদারিত্ব এবং মানবিকতা — দুটোই থাকা চাই।
🔸 আর সবশেষে, হার্ডওয়ার্ক কখনোই বৃথা যায় না।
এই ছিল আমার আপওয়ার্কের এক চমৎকার অভিজ্ঞতা,
যেটা আমাকে নতুন করে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
❤️🔥

বরকত উল্লাহ
বরকত উল্লাহ একজন প্যাশনেট Full Stack Developer, যিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন WordPress, Flutter ভিত্তিক আধুনিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে। তিনি একজন Top Rated Freelancer on Upwork এবং কাজের মান, সময়নিষ্ঠতা ও ক্লায়েন্ট সন্তুষ্টির জন্য পরিচিত।
বেশ কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি ও প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে কাজ করতে করতে, তিনি বুঝেছেন—শুধু কোড লেখা নয়, বরং চিন্তা, অভিজ্ঞতা, এবং শিখে যাওয়ার যাত্রাটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে তিনি শেয়ার করেন তার চিন্তা, শেখা, এবং জীবনের ছোট ছোট উপলব্ধি—যা একজন ডেভেলপার হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে তাকে আরও পরিপূর্ণ করেছে।
“প্রযুক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায়, আর মন দিয়ে মানুষ ছোঁয়া যায়।” — এই বিশ্বাসে তিনি প্রতিদিন নিজেকে গড়ে তুলছেন।